Saturday 23 June 2018

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশ

আমরা শরণার্থী হয়েছিলাম ৭১সালে আর রোহিঙ্গারা আমাদের এখানে শরণার্থী হচ্ছেন ৭১এর উলটা সংখ্যা ১৭সালে। তবে ব্যাপারটি আমাদের জন্য খুবই জটিল কারণ ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলায় জনসংখ্যার অনুপাত হয়ে পড়ছে বাঙালি ৪০% আর রোহিঙ্গা ৬০%।
আমরা আরো লক্ষ্য করছি বার্মা কয়েকবার বাংলাদেশের  আকাশসীমানায় প্রবেশ করেছে, তবে এই ক্ষেত্রে আমাদের শান্ত থাকতে হবে কারণ মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ভূপাতিত করা মানে তাঁদের আন্তর্জাতিক পরিসরে কথা বলার স্পেস তৈরি করে দেওয়া, রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে উধাও করে দেওয়া। অনেকেই ব্যাপারটি অনুধাবন করতে না পেরে হতাশ হচ্ছেন। হতাশ হওয়ার কিছুই নাই কারণ আমাদের শেষ ভরসার জায়গা "সেনাবাহিনী" যারা তাঁদের সাহস দক্ষতা দিয়ে সব সময় প্রমাণ করেছে দেশকে রক্ষা করেছে। ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে করেছে মিয়ানমারের বিপক্ষে, ২০০০ সালে নাফ নদীর যুদ্ধে তাঁদের পরাজিত করেছে, ২০০১ ও ২০০৫সালে ভারতকে উচিৎ জবাব দিয়েছে, ২০০৮ সালে মিয়ানমারের বিপক্ষে দিয়েছে, ২০১৪ সালেও ৬ জন বার্মিজকে খতম করেছে। Aerospace Violation এর আইন অনুসারে "কোন বিমান বা হেলিকপ্টার কোন দেশের আকাশসীমার ৫ কিমি ভিতরে প্রবেশ করার আগে শ্যুট ডাউন করা যাবে না"। মিয়ানমারের হেলিকপ্টার একবারও ৫ কিমি ক্রস করে নি। এটি ও মাথায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশ পালটা জবাব না দেওয়াই অনেকে মায়ানমার কে সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী মনে করতেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে মায়ানমারের ১৪টি স্টেটের মধ্যে ৯টিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির এই গৃহযুদ্ধকে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ হিসেবে ধরা হয়।
মায়ানমারের দৈনিক পত্রিকাগুলো দেখলে বুঝা যায় তাদের কি অবস্থা, সেখানে নিয়মিত বিদ্রোহীদের হাতে সেনা নিহতের খবর আসে, প্রয়োজনে কয়েকটি দেখুন--
১) কাচিন বিদ্রোহীদের হামলায় ২১১ মায়ানমার সেনা নিহত (http://bit.ly/2xct3rQ )
২) বিদ্রোহী গ্রুপের হামলায় কয়েক ডজন সেনা নিহত (http://reut.rs/
2y7iiVJ )
৩) বিদ্রোহী হামলায় ১০০ বার্মীজ সেনা নিহত (http://bit.ly/2x5SY5v )
৩) কাচিন স্টেটে ১০ মাসে বিদ্রোহীদের হামলায় ৩ হাজার সেনা নিহত (http://bit.ly/2jzsjbO )
অতএব সামরিক যুদ্ধ শুরু হলে ও আমরা যে এগিয়ে আছি তা নিশ্চিত।
তবে দু:খজনক হলে ও সত্য যে বাংলাদেশীরা মায়ানমার থেকে প্রতি বছর যত টাকার ইয়াবা কিনে, তা দিয়ে মায়ানমারের ৩ বছরের সামরিক বাজেট হয়।
সমস্যাটি আসলেই জটিল কারণ  রাশিয়ার স্পুটনিক নিউজের খবর অনুযায়ী রোহিঙ্গা সংকটের পেছনে রয়েছে রাখাইনের তেল সম্পদ। আর শুধু সুচি কে দোষ দিলে ভুল হবে কারণ নাটের গুরু মায়ানমার সেনাবাহিনীর জেনারেল লাইং, সুচি এই জেনারেলের সকল অন্যায় কর্মকান্ডকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
সবমিলে দাবি একটাই, মায়ানমার কে গণহত্যা বন্ধ করতেই হবে, রোহিঙ্গা দের নিজভূমিতে ফিরিয়ে নিতেই হবে। প্রয়োজনে জাতিসংঘকে "সেফটি জোন" ঘোষণা করে শান্তিরক্ষী বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দিতে হবে।

কোটা সংস্কার চাই কিনা?

বিদ্যমান_কোটা_কি_গ্রহণযোগ্য?

ইঞ্জি. মো. গিয়াস উদ্দিন জাহেদ
ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক
ইসলামী ছাত্রসেনা, কেন্দ্রীয় পরিষদ

বর্তমানে কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) যদি ১০০ জন লোক নিয়োগ দেয় তার ৪৪ জন মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পাচ্ছেন, ৩০ জন নিয়োগ পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের মধ্য থেকে, ১০ জন নারী কোটায়, ১০ জন জেলা কোটায় এবং পাঁচজন নিয়োগ পাবেন উপজাতি কোটায়। এর সাথে যোগ হয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা। অর্থাৎ সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ এখনও নিয়োগ পাচ্ছেন কোটার ভিত্তিতে। মেধাবীরা সুযোগ পাচ্ছেন বাকি ৪৪ শতাংশে। সরকারী কর্ম-কমিশন (পিএসসির) তথ্যমতে, প্রতি বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে গড়ে ৫০০ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু অংশ নেন সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী (চলতি বছরের হিসাবে)। কোটাপদ্ধতির কারণে কেউ যদি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ২২৬তম হন, তাহলে তিনি চাকরি না-ও পেতে পারেন। কারণ ৫০০ পদের মধ্যে মেধা কোটায় ২২৫ জনকে চাকুরী দেয়া যাবে। কাজেই ২২৬তম হয়ে তিনি চাকরি পাবেন না। আবার কোটা থাকলে কেউ ৭,০০০তম হয়েও চাকরি পেতেই পারেন। এমন নয় যে কোটার প্রার্থী না থাকলে মেধাবীদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ সেক্ষেত্রে ওই পদগুলো শূন্যই ফেলে রাখা হত। যেমন
২৮ তম বিসিএস -৮১৩ টি পদ
২৯ তম বিসিএস -৭৯২ টি পদ
৩০ তম বিসিএস -৭৮৪ টি পদ
৩১ তম বিসিএস -৭৭৩ টি পদ
৩৫ তম বিসিএস -৩৩৮ টি পদ শূন্য হিসেবে রয়ে গেছে। অথচ হাজার হাজার কোটাহীন মেধাবী চাকুরীর অভাবে ঘুরতেছে।
৩৬ তম বিসিএস এ পুলিশ ক্যাডারের ১১৭ জনের মধ্যে কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন ৬৪ জন, সাধারন ৫৩ জন।
এডমিন ক্যাডার ৩০০ জনের মধ্যে ১৬২ জন কোটায়, ১৩৮ জন মেধায়।
আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রে আমাদের সবার সমান অধিকার, এটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা। অথচ মাত্র ২% নাগরিককে ৫৬%কোটা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে আর ৯৮%নাগরিককে ৪৪%এর মধ্যে আটকে রাখা হচ্ছে। ইচ্ছা করলে কোটা সবাই দাবি করতে পারে যেমন কৃষক যদি বলে আমরা মৌলিক চাহিদার প্রথম ধাপ পূরণ করি আমাদের কোটা লাগবে, পোশাক শ্রমিকরা যদি বলে আমরা সবার পোশাক প্রস্তুত করি নাহলে সবাইকে উলঙ্গ থাকতে হত, আমাদের কোটা দাও, মিস্ত্রিরা যদি বলে আমরা ঘর না বানালে সবাইকে জঙ্গলে থাকতে হত, আমাদের কোটা দাও তাহলে বলুন কে কোটা থেকে বাদ যাবে? আর পাঠকরাই বলুন বর্তমান কোটা পদ্ধতি কি গ্রহণযোগ্য??
আমরা বলতে চাই না কোটা বাদ দিন, কারণ মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের সূর্যসন্তান। আমরা বলতে চাচ্ছি কোটা প্রথা সংস্কার হোক। মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য বন্ধ হোক।
ঢাকা'য় কোটা সংস্কার আন্দোলন করার কারণে ৭০০জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এই মামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।